
নীল নদে বিশাল জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ করেছে ইথিওপিয়া, যার নাম গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসাঁ ড্যাম (GERD)। প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে তৈরি এই প্রকল্পটি আফ্রিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, মিসর সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বাঁধটি আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
সম্প্রতি ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ সংসদে এ তথ্য জানান।
এই বাঁধ ঘিরে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে নীল নদের ভাটির দুই দেশ মিসর ও সুদান। তাদের আশঙ্কা, বাঁধের কারণে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ কমে যাবে, যা তাদের কৃষি ও জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
তবে ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পকে আঞ্চলিক উন্নয়নের সুযোগ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই বাঁধ মিসর ও সুদানের জন্য কোনো হুমকি নয় বরং একটি যৌথ সম্ভাবনা। এটি পুরো অঞ্চলের জন্য উপকার বয়ে আনবে।’
২০১১ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটির উচ্চতা ৪৭৫ ফুট এবং প্রস্থ প্রায় এক কিলোমিটার। বাঁধটির সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ৭ হাজার ৪০০ কোটি কিউবিক মিটার, আর এটি থেকে উৎপাদন করা যাবে ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ—যা ইথিওপিয়ার বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতার দ্বিগুণ।
পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার ১৩ কোটির বেশি জনসংখ্যা থাকলেও এখনো প্রায় অর্ধেক জনগণ বিদ্যুৎবঞ্চিত। দেশটির সরকার আশা করছে, এই বাঁধ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে বড় ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই বাঁধ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছিল।
এদিকে, মিসর তার প্রয়োজনীয় পানির ৯৭ শতাংশ-ই পায় নীল নদ থেকে। তাই উজানে এমন বড় প্রকল্পকে দেশটির জন্য জীবন-জীবিকার হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে মিসর ও সুদানের সঙ্গে একাধিক আলোচনা হলেও এখনো উল্লেখযোগ্য কোনো সমঝোতা হয়নি।
সম্প্রতি মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও সুদানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান জেনারেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এক বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে তারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘নীল নদ অববাহিকায় একতরফাভাবে নেওয়া কোনো উদ্যোগকেই আমরা সমর্থন করি না। এই অঞ্চলের পানির নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’