
সন্ধ্যার স্নিগ্ধ আকাশে বিচিত্র মেঘের খেলা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, মুগ্ধ করে মন। যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়—‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি।’ তবে সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ বলছে, এই চেনা মেঘের আচরণে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেঘের গঠন ও ধরনে পরিবর্তন হচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে উৎপন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুমণ্ডলে বেড়ে যাওয়ায় এই পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে।
পৃথিবীর আকাশে যেকোনো মুহূর্তে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অংশ মেঘে ঢাকা থাকে। এই মেঘগুলো পৃথিবীকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। মেঘ না থাকলে পৃথিবীর তাপমাত্রা আরও বেশি হতো। কিন্তু পৃথিবী যত উষ্ণ হয়ে উঠছে, ততই মেঘের চরিত্রে ভিন্নতা আসছে। গ্রিনহাউস গ্যাস বাড়ার ফলে বায়ুমণ্ডলে নতুন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, যার প্রভাবে সাদা, চকচকে মেঘের জায়গা নিচ্ছে ভাঙা ভাঙা ধূসর মেঘ।
বিশ্বের গড় তাপমাত্রা প্রত্যাশার তুলনায় অনেক দ্রুত বাড়ছে—এ নিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বেশ উদ্বিগ্ন। অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্রিশ্চিয়ান জ্যাকব মনে করেন, মেঘের আচরণে যে পরিবর্তন হচ্ছে, তা পৃথিবীর জলবায়ুকে থার্মোস্ট্যাটের মতো নিয়ন্ত্রণ করছে। উজ্জ্বল মেঘ সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে পৃথিবীকে ঠান্ডা রাখে। তবে সব মেঘের বৈশিষ্ট্য একরকম নয়। উদাহরণস্বরূপ, বিষুবরেখার কাছাকাছি অঞ্চলে থাকা ঘন সাদা মেঘ বেশি প্রতিফলন করে, কিন্তু মেরু অঞ্চলের ধূসর মেঘ তেমন নয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি প্রতিফলনকারী মেঘের এলাকা কমছে, আর কম প্রতিফলিত মেঘবিশিষ্ট এলাকা বাড়ছে। এর ফলে বেশি সূর্যরশ্মি সরাসরি পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষকদের মতে, অ্যারোসল (বাতাসে মিশে থাকা সূক্ষ্ম কণিকা) দূষণও মেঘের গঠন পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে।
প্রাকৃতিক বাতাসের গতিপ্রবাহ সাধারণত নিরক্ষরেখার আশপাশে বেশি গরম থাকে এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে তা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে এই বাতাস চলাচলের ধরণও বদলে যাচ্ছে, যার ফলে মেঘের অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে।
বিশেষ করে নিরক্ষরেখার কাছাকাছি আন্তঃক্রান্তীয় অভিসৃতি অঞ্চলে ঘন, প্রতিফলিত মেঘের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। উষ্ণায়ন শুধু বায়ুপ্রবাহ নয়, মেঘের ধরনেও বড় ধরনের রূপান্তর আনছে।