ইরানে মার্কিন হামলা: কোন ৩ পারমাণবিক স্থাপনা ছিল টার্গেটে?
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

শনিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প 'ট্রুথ সোশ্যাল'-এ একটি পোস্টে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ানোর পরই এই হামলা হয়।

হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল—নাতাঞ্জ, ফর্দো, এবং ইস্পাহান। এই তিনটি সাইটই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত, যেখানে অতীতেও ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ (NTI) জানায়, নাতাঞ্জে রয়েছে ছয়টি ওপরের স্থাপনা ও তিনটি ভূগর্ভস্থ কেন্দ্র, যেগুলোর দুটিতে ৫০ হাজার পর্যন্ত সেন্ট্রিফিউজ স্থাপনের সক্ষমতা রয়েছে।

এই সাইটটিই ছিল ইসরায়েলের প্রাথমিক হামলার লক্ষ্যবস্তু। স্যাটেলাইট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এখানকার ‘পাইলট ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’-এর উপরের কাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

২০০৩ সাল থেকে এই কেন্দ্রটি চালু রয়েছে, এবং এখানে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)। অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে লাগে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধতা।

দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ভূগর্ভে স্থাপিত অংশে সেন্ট্রিফিউজগুলো বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করাই ছিল হামলার মূল কৌশল, যেহেতু সরাসরি ক্ষতি করা কঠিন।

এই সাইটটি এখনো অনেকটাই রহস্যঘেরা। এটি কওম শহরের কাছে, পাহাড়ের গভীরে নির্মিত। একে অত্যন্ত সুরক্ষিত ও গোপন একটি স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইসরায়েলি গোয়েন্দারা ইরানের গোপন নথি চুরি করে এই কেন্দ্র সম্পর্কে প্রথম তথ্য পায়। মূল কক্ষগুলো মাটির প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিটার নিচে, যা বিমান হামলার জন্য কঠিন লক্ষ্যবস্তু।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতো গভীরে হামলা করতে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বোমা কাজে লাগতে পারে, তবে তা দিয়েও পুরোপুরি ধ্বংস নাও হতে পারে।

ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি (ISIS) বলছে, এখানে উৎপাদিত ৬০% ইউরেনিয়ামকে ২৩৩ কেজি অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়ামে রূপান্তর করতে ইরানের সময় লাগবে মাত্র তিন সপ্তাহ—যা দিয়ে ৯টি পারমাণবিক বোমা বানানো সম্ভব।

IAEA-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, এখানে বর্তমানে প্রায় ২,৭০০টি সেন্ট্রিফিউজ সক্রিয় রয়েছে এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির হার আরও বেড়েছে।

ইরানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত ইস্পাহান হল দেশটির বৃহত্তম পারমাণবিক গবেষণা কমপ্লেক্স। এটি ১৯৮৪ সালে চীনের সহায়তায় গড়ে তোলা হয়।

NTI জানিয়েছে, এখানে প্রায় ৩ হাজার বিজ্ঞানী কাজ করেন এবং একে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির 'কেন্দ্রবিন্দু' হিসেবে ধরা হয়।

এখানে রয়েছে চীনের দেওয়া তিনটি গবেষণা রিঅ্যাক্টর, একটি কনভার্সন ফ্যাসিলিটি, জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র, জিরকোনিয়াম ক্ল্যাডিং কারখানা, এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ও গবেষণা অবকাঠামো।