
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
শিক্ষকতা শুধু জ্ঞান বিতরণ নয়, এটি ভবিষ্যৎ নির্মাণের মহৎ ব্রত"। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আমরা কথা বলেছি, একজন গুণী শিক্ষাবিদের সঙ্গে, যিনি শুধু শিক্ষক নন, বরং আদর্শ, অনুপ্রেরণা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন তার শিক্ষার্থীদের মাঝে। তিনি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন, প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ; প্রাক্তন সিন্ডিকেট সদস্য এবং বর্তমান চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষকতা পেশা, অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশনা নিয়ে তার সঙ্গে হয়েছে এক হৃদয়গ্রাহী আলাপ।
আপনার শিক্ষক হওয়ার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে এসেছিল?
শিক্ষকতা অত্যন্ত মহান ও সম্মানজনক পেশা। শিক্ষকতা শুধু জ্ঞান সৃজন ও বিতরণের মাধ্যমই নয়, পাশাপাশি মানুষ গড়ার সর্বোত্তম হাতিয়ারও বটে। আমার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন। সেই বাল্যকাল থেকে বাবাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। সেই থেকেই আমারও শিক্ষক হওয়ার অনুপ্রেরণা জাগ্রত হয়।
আপনি কখন এবং কীভাবে শিক্ষকতা পেশায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
আমি ছাত্র জীবন থেকেই শিক্ষকতা পেশার প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলাম। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষকতার সাথেও জড়িত ছিলাম। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর প্রথমে একটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করি। এরপর ২০০৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা নামক মহান পেশার সঙ্গে যুক্ত আছি।
শিক্ষকতা শুরু করার সময়ের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আমি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুই যুগের অধিক সময় ধরে শিক্ষকতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অত্যন্ত আশাপ্রদ। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা হলো একজন শিক্ষক হিসেবে জ্ঞান প্রদান, শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা এবং তাদের ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করার এক চলমান প্রক্রিয়া। এখানে শিক্ষক নিজের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনেন। একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে নিজের যোগ্যতা, পেশাগত জ্ঞান ও শিক্ষাদানের কৌশলগুলো ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং মানবতাবোধ জাগ্রত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী বলে মনে করেন?
বর্তমান সময়ে শিক্ষকতার চ্যালেঞ্জ বহুমাত্রিক। দ্রুত পরিবর্তনশীল কারিকুলাম, প্রযুক্তিনির্ভর নতুন শিক্ষাপদ্ধতি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা, এবং শিক্ষক–শিক্ষার্থীর মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন বড় চ্যালেঞ্জ।এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ, সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতা এবং পেশাগত দক্ষতা ও জ্ঞান হালনাগাদ রাখার প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে।
একজন আদর্শ শিক্ষক কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
একজন আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান নতুন প্রজন্মের শিক্ষকদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
নতুন প্রজন্মের শিক্ষকদের উচিত আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া এবং নিজেকে ক্রমাগত উন্নত করা। তাদের সময়নিষ্ঠ, গবেষণামুখী ও উদ্ভাবনী চিন্তায় সমৃদ্ধ হতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করে শেখার আগ্রহ জাগানো এবং সমাজ–দেশের প্রয়োজনে যুগোপযোগী চিন্তাসম্পন্ন নাগরিক তৈরি করাই একজন আধুনিক শিক্ষকের মূল দায়িত্ব।অর্জনের আগ্রহ জাগিয়ে তোলেন, তাদের সম্ভাবনা চিনতে পারেন এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন। তিনি সহায়ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রেণিকক্ষ পরিবেশ তৈরি করেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীর অনন্যতা বিবেচনা করে শিক্ষাদান পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
একজন আদর্শ শিক্ষক কেবল তথ্য প্রদানকারী নন, বরং শিক্ষার্থীর বন্ধু, উপদেষ্টা ও পথপ্রদর্শক। তার ইতিবাচক প্রভাব শিক্ষার্থীদের জীবনে স্থায়ী দাগ ফেলে, যা একটি সুস্থ ও উন্নত জাতি গঠনে সহায়তা করে।
শিক্ষক দিবসে আপনি কেমন অনুভব করেন?
শিক্ষক দিবস শিক্ষকের অবদান স্মরণ, তাঁদের সম্মান প্রদর্শন ও পরিশ্রমকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিশেষ একটি দিন। এটি শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ, যা ভবিষ্যতের কারিগর হিসেবে তাঁদের ভূমিকা তুলে ধরে।
এই দিবসে আমরা স্মরণ করি সেই শিক্ষককে, যিনি জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনে পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন একজন দ্বিতীয় পিতামাতার মতো।
শিক্ষার্থীদের সফল হতে হলে কী কী বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
সফলতার জন্য সময় ব্যবস্থাপনা, লক্ষ্য নির্ধারণ, কঠোর পরিশ্রম, ইতিবাচক মনোভাব, আত্মবিশ্বাস এবং ভুল থেকে শেখার মানসিকতা থাকা জরুরি। তাছাড়া ভাষাজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তির দক্ষতা, নতুন জিনিস শেখার আগ্রহ এবং প্রয়োজনমতো সঠিক পরামর্শ গ্রহণ—এই সবকিছু মিলেই একজন শিক্ষার্থীকে সফলতার পথে নিয়ে যায়।
আপনি যদি আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারতেন, আবারও শিক্ষক হতেন কি?
অবশ্যই! নতুন করে জীবন শুরু করলে আবারও শিক্ষক হতে চাইতাম। কারণ শিক্ষকতার মাধ্যমে শুধু জ্ঞানই বিতরণ করা হয় না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিক ও মানবিক বিকাশেও ভূমিকা রাখা যায়। এই পেশা যেমন সম্মানজনক, তেমনি চ্যালেঞ্জিংও। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা, তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা—এটাই শিক্ষকতার সৌন্দর্য। শিক্ষকতা এক গৌরবময় মহান ব্রত।