সরকারি সেবায় ঘুষের শিকার প্রতি তিনজনের একজন
সংগৃহীত ছবি

সরকারি সেবা নিতে গিয়ে দেশের প্রতি তিনজন নাগরিকের একজন ঘুষ বা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক ফলাফলে উঠে এসেছে এই চিত্র।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। দেশের ৬৪ জেলার ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ৮৪ হাজার ৮০৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নাগরিক সরকারি সেবা গ্রহণে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর বিরুদ্ধে, যেখানে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ সেবাগ্রহীতা দুর্নীতির মুখোমুখি হয়েছেন। এরপর রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী (৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ), পাসপোর্ট অফিস (৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ) এবং ভূমি অফিস (৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ)।

ঘুষের অভিজ্ঞতায় পুরুষরা এগিয়ে। ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ পুরুষ এবং ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ নারী সরকারি সেবা নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরা নিরাপদ মনে করেন ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক। তবে পুরুষদের মধ্যে এই হার ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে নিরাপত্তা বোধের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৮৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। নিজের বাসায় নিরাপদ বোধ করেন ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ নাগরিক।

মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন তারা সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন। আর ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ বিশ্বাস করেন, তারা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব ফেলতে পারেন।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক। এর মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ সেবাকে সহজপ্রাপ্য এবং ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ ব্যয়কে সহনীয় মনে করেন। তবে স্বাস্থ্যসেবার মানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬৫ দশমিক ০৭ শতাংশ, স্বাস্থ্যকর্মীদের আচরণে ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একটি সন্তান সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ে। প্রাথমিক শিক্ষায় প্রবেশাধিকারের হার ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে মনে করেন ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মাধ্যমিকে এ হার কিছুটা কম হলেও ইতিবাচক, যথাক্রমে ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ ও ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পেরেছেন। এদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক এবং ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন।

গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নাগরিক বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। শহরাঞ্চলে এই হার ২২ দশমিক ০১ শতাংশ এবং গ্রামে ১৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বৈষম্য ঘটেছে আর্থ-সামাজিক ও লিঙ্গভিত্তিক কারণে। বৈষম্যের প্রধান স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পরিবার, গণপরিবহন বা উন্মুক্ত স্থান এবং কর্মস্থল।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল সবাইকে ঘুষ দিতে হয়। তারপরও জরিপে উঠে এসেছে ৩১ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়। নারীদের তুলনায় পুরুষদের কাছে ঘুষ বেশি চাওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এত দ্রুত দুর্নীতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসা উদ্বেগজনক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও বদলি নিয়ে ব্যাপক ঘুষ লেনদেন হয়।