কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চালু হচ্ছে ৫০ শয্যার আধুনিক আইসিইউ
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল শিগগিরই দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে উদ্বোধন করা হবে ৫০ শয্যার অত্যাধুনিক আইসিইউ, যা দেশের স্বাস্থ্যসেবায় একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।


হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, হাসপাতালটির লক্ষ্য হলো সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে দরিদ্র, প্রান্তিক ও দুস্থ মানুষদের জন্য নির্ভরযোগ্য ভরসাস্থল হিসেবে এটি গড়ে তোলা।


ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “কুর্মিটোলা হাসপাতাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পূর্ণাঙ্গ সিভিল হাসপাতাল। এটি শতভাগ বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত। ২০১২ সালের ১৩ মে উদ্বোধনের পর থেকেই আমরা সাধারণ মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছি।”


তিনি আরও জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ (ওপিডি) এবং ডায়াগনস্টিক পরিষেবা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে যেখানে ২৪/৭ প্যাথলজিক্যাল সেবা সম্ভব হয়নি, সেখানে কুর্মিটোলা হাসপাতাল দিনরাত সেবা নিশ্চিত করছে। এছাড়াও কেমোথেরাপি, ছোট-বড় অস্ত্রোপচার ও গাইনোকোলজি বিভাগেও ২৪ ঘণ্টা সেবা চালু রয়েছে।


বর্তমানে হাসপাতালের ২০ শয্যার সিসিইউ এবং ২০ শয্যার এসডিইউ কার্যক্রম চালু রয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধিত ৫০ শয্যার নতুন আইসিইউ-র সঙ্গে সাথে ছয় তলায় ২০ শয্যার এনআইসিইউ স্থাপন কাজ শেষ পর্যায়ে।


ডায়ালাইসিস সেবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বর্তমানে ১০০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিটে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন। মাত্র ৪৭০ টাকায় এই সেবা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। নতুন ইউনিট চালু হলে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০০ জন রোগী সুবিধা পাবেন।”


ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে রোগীরা অনলাইনে রিপোর্ট সংগ্রহ ও টিকিট কাটার সুবিধা পাচ্ছেন। শিগ্রই অনলাইন ফি পেমেন্ট সুবিধাও চালু হবে। এছাড়া তিন মাসের মধ্যে একটি প্যাভিলিয়ন চালু হবে, যেখানে সব সেবা এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে।”


বিশেষায়িত বিভাগের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি জানান, কার্ডিয়াক ইন্টারভেনশন সেন্টারে প্রতিদিন ১০টি সফল করোনারি ইন্টারভেনশন সম্পন্ন হচ্ছে। ক্যানসার সেন্টারে কেমোথেরাপি সেবা চালু রয়েছে, এবং শিগ্রই রেডিওথেরাপি মেশিন স্থাপন হবে। নতুন গ্যাস্ট্রোলজি সেন্টার দেশের অন্যতম আধুনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে।


স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সেবাও প্রসারিত হয়েছে। “আগে প্রতিদিন ৫-৭টি সিজারিয়ান হতো, এখন তা ২৫-৩০। তবে স্বাভাবিক প্রসবকেই আমরা প্রথমে অগ্রাধিকার দেই। এই বিভাগও ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।”


হাসপাতাল পরিচালক বলেন, “আমাদের টিম সর্বদা রোগী, বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের পাশে আছে। নতুন আইসিইউ, এনআইসিইউ, ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং বিশেষায়িত বিভাগ চালু হলে কুর্মিটোলা হাসপাতাল দেশের স্বাস্থ্যসেবায় এক নতুন দিগন্ত স্থাপন করবে।”


অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী মো. রশিদ-উন-নবী (প্রধান অতিথি) এবং সিএমএইচ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিফ ফিজিশিয়ান অধ্যাপক ডা. সায়েদা আলেয়া সুলতানা (বিশেষ অতিথি)। কর্মশালার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মহসীন আহমেদ।