
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভিপি পদে মোট ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যা ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের অন্যতম আকর্ষণ। প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তিন প্রার্থী—ছাত্রশিবির সমর্থিত ইব্রাহিম হোসেন রনি, ছাত্রদল সমর্থিত সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় এবং স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের মাহফুজুর রহমান।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখে থেকে নেতৃত্বদান, ক্যাম্পাসে গত এক বছরের কাজ, দলীয় অবস্থান ও ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার কারণে নির্বাচনি মাঠে এগিয়ে আছেন তারা। তিনজনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাও ব্যাপক।
ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি জুলাই বিপ্লবে চট্টগ্রামের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই রনিকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। যেখানে জুলাই আন্দোলনের ছবি, ভিডিও ও মুহূর্তগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পেজে শেয়ার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সভা সেমিনারে ইব্রাহিম রনির সুন্দর উপস্থাপন ও বাগ্মিতা তাকে শিক্ষার্থীদের মাঝে সুপরিচিত করে তুলেছে।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ও জুলাই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া ফ্যাসিবাদী আমলে ছাত্রলীগের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। গত এক বছরে ছাত্রদলের অন্য নেতাদের তুলনায় তার কার্যক্রম ক্যাম্পাসে বেশি দেখে গিয়েছে। প্রশাসনের যেকোনো অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্রদলের প্রার্থী শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া পূরণে সক্রিয় ছিলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়া ফ্যাসিবাদী আমলে ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত হওয়া তাকে এগিয়ে রাখছে।
ভিপি পদে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান। তিনিও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে ক্যাম্পাস থেকে আন্দোলন শহরে ছড়িয়ে দিতে তার প্রচেষ্টা ছিলো। জুলাই পরবর্তী ক্যাম্পাসেও শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন মাহফুজ। বাগছাসের কেন্দ্রীয় পদে থাকলেও লেজুড়বৃত্তির কারণে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন তিনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করছেন, মাহফুজের মত নেতৃত্ব আসলে কোন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়িত হবে না। তিনি যেমন বাগছাসের লেজুড় থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র প্যানেল করেছেন, তেমনি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন না করে শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়েই কাজ করবেন।
শিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি বলেন, "আমাদের প্রধান লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসন অথবা অনাবাসিকদের ভাতা নিশ্চিতের জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যহত থাকবে। শাটলট্রেন ও যাতায়াত ভোগান্তি নিরসনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সর্বোপরি একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা নিজেরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হই, সবগুলোকেই গুরুত্ব বিবেচনায় সমাধানের চেষ্টা করবো আমরা।"
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন,"আমি নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে যে মৌলিক চাহিদা, সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত সে বঞ্চিতের জায়গায় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যাব। আমি অতীতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সন্ত্রাসীরা আমাকে অর্ধমৃত করে ক্যাম্পাসে ফেলে দেয়, শিক্ষার্থীদের অধিকারের বিষয়ে আমরা সবসময় ছিলাম কখনো আপোষ করিনি। ৫ আগস্ট পরবর্তী আমরা নতুন ধারার রাজনীতি করার প্রচেষ্টা করেছি গুপ্ত হামলা বন্ধ,চারুকলা ইন্সটিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন,আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা,শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবীতে ছাত্রদল পাশে ছিল তাই আশা করি তাদের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচিত করবে।"
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন,"আমাদের প্রথম কাজ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত সময় ধরে চলে আসা বিভিন্ন বৈষম্য নিরসন করে আমরা ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস বিনির্মাণের প্রচেষ্টা চালাবো। এরপর ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে কাজ করব যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো একটি সিন্ডিকেট বা সংগঠনের হাতে নির্যাতিত না হয়। এরপর আমরা একাডেমিক অব্যবস্থাপনা দুর করবো যাতে করে একজন শিক্ষার্থী যেই স্বপ্ন নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। সর্বোপরি ৩৬ বছর পর যে চাকসু নির্বাচন হচ্ছে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেন তাদের অধিকার বুঝে পায়,সেটি আদায় করতে যা যা করা লাগে সেগুলো আমরা করে যাবো ইনশাআল্লাহ।"