 
      আজ ২৯ অক্টোবর, বিশ্ব সোরিয়াসিস দিবস। সারা বিশ্বের সোরিয়াসিস রোগী ও তাদের পরিবারের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দিনটি পালন করা হয়। ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক সোরিয়াসিস ফেডারেশন অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দিবসটির সূচনা হয়। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দিবসটির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। প্রতি বছর এই দিনে বিভিন্ন দেশে সেমিনার, আলোচনাসভা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
সোরিয়াসিস কোনো সংক্রামক রোগ নয়। এটি ত্বকের এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত অসুখ, যা শুধু ত্বকেই নয় মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা না নিলে এ রোগ হতাশা, আর্থ্রাইটিস, হৃদ্রোগ ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩০ বছর বয়সের পর সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। রোগটির সঠিক কারণ জানা না গেলেও বংশগত, পরিবেশগত ও ইমিউন সিস্টেমের ভারসাম্যহীনতা এর পেছনে ভূমিকা রাখে। মানুষের ত্বকের কোষ প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন কোষ তৈরি হয়। সাধারণত এই প্রক্রিয়া ২৮ দিন সময় নেয়, কিন্তু সোরিয়াসিস রোগীদের ক্ষেত্রে তা মাত্র পাঁচ থেকে সাত দিনে সম্পন্ন হয়। এ কারণে মৃত কোষ জমে ত্বকে লালচে আঁশযুক্ত দাগ তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক সংক্রমণ, আবহাওয়া, ধূমপান, মদ্যপান, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, ম্যালেরিয়ার ওষুধ ও স্টেরয়েডজাত ওষুধ সেবনও এই রোগের কারণ হতে পারে।
সোরিয়াসিসের উপসর্গ হিসেবে ত্বক পুরু হয়ে লালচে দাগ পড়ে, যা রুপালি আঁশে ঢাকা থাকে। ত্বক চুলকাতে পারে, ব্যথা হতে পারে, এমনকি ক্ষত দেখা দেয়। কনুই, হাঁটু, মাথা, হাত ও পায়ের নখে সাধারণত এটি বেশি হয়। দীর্ঘদিন এ রোগে আক্রান্ত থাকলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন যকৃত, জয়েন্ট ও হৃদ্যন্ত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে।
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শরীরের অল্প অংশ আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্রিম, পেট্রোলিয়াম জেলি বা লোশন ব্যবহার উপকারী। এতে শুষ্ক ত্বক আর্দ্র থাকে। তবে জটিলতা দেখা দিলে ওষুধ সেবন, আলট্রাভায়োলেট বা বায়োলজিক্যাল থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, রোগীদের সরাসরি রোদে দীর্ঘ সময় থাকা উচিত নয় এবং চিকিৎসা শুরু করতে দেরি করা উচিত নয়, কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগের জটিলতাও বাড়ে।
চিকিৎসকেরা আরও বলেন, কিছু খাবার সোরিয়াসিসের অবস্থা আরও খারাপ করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম চিনিযুক্ত খাবার যেমন গ্রানোলা, দই বা মিষ্টিযুক্ত সিরিয়াল। এসব খাবারের অতিরিক্ত চিনি শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে দেয়। তেমনি অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবারও সোরিয়াসিসকে বাড়িয়ে দিতে পারে। চিকেন পট পাই বা প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা অতিরিক্ত লবণ শরীরে প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়া প্রায় ২৫ শতাংশ সোরিয়াসিস রোগীর গ্লুটেনের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকে। তাই গ্লুটেনযুক্ত খাবার খাওয়ার পর উপসর্গ বেড়ে গেলে তা সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া উচিত।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল হুদা বলেন, “সোরিয়াসিস কোনো ভয়ংকর বা সংক্রামক রোগ নয়। নিয়মিত চিকিৎসা, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।”
বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২ কোটি মানুষ সোরিয়াসিসে আক্রান্ত। দিবসটির মূল বার্তা, “সচেতনতা, সহমর্মিতা ও চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ জীবন।”
মোঃ কবিরুজ্জামান শেখ
ম্যানেজার প্রোডাকশন
ইবনেসিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি পিএলসি।
 মোঃ কবিরুজ্জামান শেখ
                     মোঃ কবিরুজ্জামান শেখ 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                
