
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হামিদুর রহমান মিলনায়তনের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আটজন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে এই সম্মেলন আয়োজিত হয়।
সম্মেলন শেষে তারা ইকসু গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর কর্মসূচির ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকদের মধ্য থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন। এছাড়াও অন্য আয়োজকরা হলেন– আল ফিকহ অ্যান্ড ল’ বিভাগের হাসিব আল সজিব ও সায়েম আহমেদ, ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রাকিবুল ইসলাম, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাজ্জাতুল্লাহ শেখ, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের আহমাদ আল আলামিন, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের জুলকারনাইন দোলন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান। এতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ইবি শাখার আহবায়ক সাহেদ আহমেদ, শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ইবি শাখার সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট, ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আহমাদ গালিব, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, খেলাফতে ছাত্র মজলিস ইবি শাখার সভাপতি সাদেক আহম্মদসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমরা দেখেছি বিভিন্ন দাবিদাওয়া উপস্থাপনের পাশাপাশি গুরুত্ব সহকারে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ইকসু গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিতে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইকসু গঠনের জন্য কোন পদক্ষেপ তো নেয় ই নি বরং বারবার আইনের দোহাই দেখিয়ে ইকসু গঠনকে থামিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের অচলায়তন ভেঙে যেভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং রাকসু নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ গঠন এবং নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়েছে, "যে আইনের দোহাই দেখিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইকসু গঠনে রাজি হচ্ছে না, একই ধরনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে না থাকা সত্ত্বেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বেরোবি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ আমরা এটা বলতেই পারি, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে চাইলে যে কোন যৌক্তিক বিষয়ই অর্জন করা সম্ভব এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য একটি দাবি মেনে নিতে অবশ্যই বাধ্য হবে।"
লিখিত বক্তব্যে তারা আরও জানান, "বারবার আলোচনার টেবিলে দাবি জানিয়েও যেহেতু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইকসু গঠনে কোন পদক্ষেপ নেয়নি তাই আমরা এবার থেকে রাজপথের ভাষায় ইকসু আদায়ের লক্ষ্যে একমত হয়েছি। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং কোনোমতেই এই অধিকার থেকে কোন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা চলবে না। ইকসু কোন একক ব্যক্তির বা একক সংগঠনের না, ইকসু আমার, আপনার এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর। ইকসুর দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছিলেন তাদের উদাত্তকণ্ঠে আমাদের এই ইকসু গঠন আন্দোলন -এর সাথে একাত্মতা প্রকাশের আহবান জানাই।"
তারা আরও বলেন, "আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকসু বাস্তবায়ন করতে। চব্বিশের জুলাইয়ে আমরা ছাত্রজনতা যেভাবে একটি ঐক্যবদ্ধ ব্যানারে এক কাতারে এসে দাঁড়িয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের দাবি আদায় করেছিলাম, ঠিক সেভাবেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সবাই এই ন্যায্য দাবি আদায় করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।"
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বসার জায়গা অব্যবস্থাপনা হওয়ায় রাজনৈতিক নেতারা পেছনের সাড়িতে গিয়ে বসেন। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের’ নেতা উপস্থিতির অভিযোগ তোলেন এক শিক্ষার্থী। তাছাড়াও বিভিন্ন ইস্যু ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এই সময় ইকসুর দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক সহসমন্বয়ক মোবাশশির আমিন। তাছাড়াও শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এসব নিয়ে কয়েক দফায় সেখানে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সম্মেলন স্থল থেকে বেরিয়ে যান।
ইবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, "যখন কেউ আহ্বান করে ছাত্র সংসদ নিয়ে কাজ করে। আমরা দল মত নির্বিশেষে সবাই সেখানে চলে আসি। কিন্তু এখানে এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি তাদের নেতা বনে যাওয়ার প্রবণতা কাজ করছে। তারা একবার বলছে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের আহ্বান করেছে আরেক বার বলছে আহ্বান করে নাই। কিন্তু সবাইকেই জানানো হইছে।আমরা আশা প্রত্যাশা স্বপ্নে নিয়ে এখানে এসেছি এবং সকল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং শিক্ষার্থীরা একই প্লাটফর্মে থেকে আন্দোলন করবো। কিন্তু আমরা এখানে দেখতে পাচ্ছি দ্বিচারিতা করা হচ্ছে।"
ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, "আমাদের ছোট ভাই বোরহানউদ্দিন দাওয়াত করে বৈঠক ও সংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় আছে জানায়। কিন্তু আসার পরে দেখি এটি শুধু সংবাদ সম্মেলন হচ্ছে। তারা সাত আটজন আর সাংবাদিক ভাইয়েরা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। সাধারন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে প্লাটফর্ম গঠিত হয়েছে তাই আমরা এসেছি। কিন্তু এখানে তারা সাত আটজন ছাড়া কোন সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলোনা। এবং আমাদের বোনদেরও অংশগ্রহন ছিলোনা। যেহেতু এটি সাধারন শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম সকল বিভাগের প্রতিনিধি এবং বোনদের ও উপস্থিত কাম্য ছিল। গত কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের শোকজ করা হয়েছে এটি ধামাচাপা দেওয়ার একটা অ্যাজেন্ডা আমি ধারণা করছি।"
সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন,"আমরা চেয়েছি একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন যেহেতু জুলাইয়ের এক বছর পরে ও ইকসু গঠিত হয়নি।আমরা চেয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদের সহযোদ্ধা বোনেরাও থাকবে।"