
প্রযুক্তিতে বিশ্বনেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—উদ্ভাবনী সফটওয়্যার, ক্লাউড পরিষেবা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানে। তবুও, মাত্র তিন বছর আগে চীনা সরকারের সমর্থিত বলে ধারণা করা হ্যাকাররা এমন এক সাইবার অভিযানে সফল হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিরক্ষায় বড় দুর্বলতা উন্মোচন করে।
“সল্ট টাইফুন” নামে পরিচিত এই আক্রমণে হ্যাকাররা প্রধান মার্কিন টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার লাভ করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে অবস্থান বজায় রাখে। তারা কথোপকথন রেকর্ড, কর্মকর্তাদের গতিবিধি নজরদারি এবং গোটা দেশে গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রম ট্র্যাক করার ক্ষমতা গড়ে তোলে। মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, এই নজরদারির পূর্ণ মাত্রা হয়তো তারা কখনোই জানতে পারবেন না।
এই সাইবার হামলা ছিল কেবল এককালীন গোয়েন্দা সাফল্য নয়; বরং এটি নতুন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। ইন্টারনেটের যুগে চীন এখন ডিজিটাল যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছে, আর যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়ছে। সাইবারস্পেসের কোনও সীমান্ত না থাকায়, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ গ্রিড, পাইপলাইন, জল শোধনাগার ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সবসময়ই ঝুঁকির মুখে।
মার্কিন জ্বালানি, জল, পরিবহন ও পাইপলাইন ব্যবস্থায় চীনা ম্যালওয়্যারও পাওয়া গেছে, যা মূলত নাশকতার জন্য তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে। ভবিষ্যতের কোনও সংকটে এসব ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে সামরিক সমাবেশ বিলম্বিত করা, বিমান চলাচল ব্যাহত করা বা ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটানো সম্ভব হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাইবার প্রতিরক্ষার মৌলিক পার্থক্যের ফল। চীন তার কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার কারণে ব্যাপক নজরদারিকে সাইবার নিরাপত্তার অংশ হিসেবে গ্রহণ করে, কিন্তু আমেরিকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এ ধরনের নজরদারি সীমিত করে রাখে। উপরন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো মূলত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে, যাদের সাইবার নিরাপত্তা বিনিয়োগ ভিন্নমাত্রার এবং সরকারি সহায়তাও সীমিত। ফলে হ্যাকারদের চিহ্নিত করলেও তাদের পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া কঠিন, আর সরালেও ফের ফিরে আসার ঝুঁকি থেকেই যায়।
“সল্ট টাইফুন” শুধু একটি সাইবার হামলার গল্প নয়—এটি ডিজিটাল শক্তির লড়াইয়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা দুর্বলতার সতর্ক সংকেত।
এস আর কে