
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দাবি করেছেন, নির্বাচনকে বিলম্বিত করতেই পরিকল্পিতভাবে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির প্রসঙ্গ সামনে আনা হচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে’ আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, “এই পিআর পদ্ধতির পেছনে উদ্দেশ্য আছে। কেউ বলছে করবে, কেউ বলছে করবে না—এভাবে বলা হবে নির্বাচন সম্ভব হচ্ছে না। আর এই অজুহাতে সময় বাড়ানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সব ফাজলামি–বাঁদরামি বন্ধ করুন। দেশের মানুষ যেভাবে ভোট দিতে অভ্যস্ত, সেভাবেই নির্বাচন হবে। অন্য কোনো পদ্ধতি জনগণ মেনে নেবে না।”
নির্বাচন নিয়ে বিলম্ব ও অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “আমি বুঝি না, নির্বাচন নিয়ে এত টালবাহানা কেন? আমি শুধু একটা কথাই বুঝি, বিচার যদি দেরিতে হয়, সেটা আদতে বিচারই নয়।”
তিনি দাবি করেন, নির্বাচন নিয়ে সরকার নানা ষড়যন্ত্র করছে এবং ভোটের তারিখ ঘোষণার পেছনেও কোনো সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকতে পারে। তিনি বলেন, “আমি সন্দেহ করি, তারিখ ঘোষণার পেছনেও ষড়যন্ত্র রয়েছে।”
ইভিএম পদ্ধতি যেমন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি, তেমনি পিআর পদ্ধতিও মানুষ মানবে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস। তাঁর ভাষায়, “ইভিএম গিলাতে চেয়েছিল সরকার, পারে নাই। এবার পিআর খাওয়াতে চাইছে, তাও গিলে ফেলবে না জনগণ।”
তিনি আরও বলেন, “এই দেশের মানুষ এখনো পিআর বুঝে না। আগে ভোট দেওয়া শেখান, পরে পিআরের কথা বলেন। নতুন নতুন তত্ত্ব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না।”
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “তারা যত উপায় আছে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে। বিএনপিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। কিন্তু বিএনপি আন্দোলনে থেকে অভ্যস্ত, প্রয়োজনে আরও ১৭ বছর আন্দোলন করব।”
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তারা সবসময় বিএনপির বিপরীত কাজ করে। কখনো আওয়ামী লীগের ছায়ায়, কখনো বিএনপির ঘাড়ে চড়ে, আবার এখন এনসিপির ঘাড়ে চড়েছে—তবে কোনো ফল হবে না।”
সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “এই সরকারের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পচে গেছে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এনসিপির সরকার আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এনসিপির নেতারা সরকারি প্রটোকল পাচ্ছেন, সার্কিট হাউস ব্যবহার করছেন। অথচ আমরা এতদিন মন্ত্রী ছিলাম, মেয়র ছিলাম—আমরা এসব সুবিধা পাই না।”
বিএনপি নেতাদের নিয়ে সরকারদলীয় কটাক্ষের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, “যাঁদের ৫ আগস্টের আগে রাজপথে দেখা যায়নি, তারা এখন আমাদের সম্মানহানি করছে।”
বিএনপির দীর্ঘদিনের আন্দোলন নিয়েও সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, “সরকার একদিনে পড়ে না। বিএনপির ১৭ বছরের আন্দোলনের কারণেই সরকার এখন দুর্বল হয়েছে। যারা প্রশ্ন তোলে, তারা কি আন্দোলনে একটাও গুলি খেয়েছে? হোঁচট খেয়েছে?”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ। বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান, মহিলা দল সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ইশরাক হোসেনসহ আরও অনেকে।