
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল সোমবার আবারও বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকি দিয়ে ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী আগস্টের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি একেবারে কঠোর নয় এবং দর-কষাকষার সুযোগ এখনও রয়েছে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার দেশের সরকারপ্রধানদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ট্রাম্প জানান, গত এপ্রিলে যেসব পাল্টা শুল্ক স্থগিত করা হয়েছিল, সেগুলো আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে, এমনকি আরও বেশি হারে কার্যকর হতে পারে।
ট্রাম্প তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মালয়েশিয়াসহ মোট ১৪টি দেশের পণ্যের ওপর ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে।
তবে আগের মত এবারও দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রেখেছেন ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প। যদিও তাঁর এই ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে নতুন করে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক নৈশভোজে সময়সীমা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মতে, সময়সীমা ঠিক আছে, কিন্তু শতভাগ নয়।’
চিঠিগুলোর বিষয়বস্তু কি চূড়ান্ত প্রস্তাব—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে চূড়ান্ত বলছি না। কেউ যদি বিকল্প কোনো প্রস্তাব দেয় যা আমার পছন্দ হয়, তাহলে আমরা সেটা বিবেচনা করব।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ এপ্রিল ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ ঘোষণা করে ট্রাম্প বিদেশি পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছিলেন। সে সময় ১০ শতাংশ হারে শুল্ক ধার্য করা হলেও, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় ওই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়।
এই অতিরিক্ত শুল্ক আগামীকাল বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এর আগেই ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারপ্রধানদের কাছে পাঠানো প্রায় অভিন্ন চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যথাযথভাবে পারস্পরিক নয়, এ কারণেই শুল্ক আরোপ করা হবে।
যদি এসব দেশ পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে আরও কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
তবে গতকাল ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে পূর্বঘোষিত সময়সীমা ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন, যা বিষয়টিকে আরও বিলম্বিত করেছে।
দেশভেদে শুল্কহার
ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা চিঠি অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যের ওপর ৩২ শতাংশ, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ এবং থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে। অধিকাংশ দেশের ক্ষেত্রে শুল্কহার পূর্বঘোষিত মতোই থাকলেও লাওস ও কম্বোডিয়ার মতো কিছু দেশের জন্য তা অপেক্ষাকৃত কম।
ট্রাম্প প্রশাসন ‘৯০ দিনে ৯০টি চুক্তি’র যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হয়েছে। চীনের সঙ্গে অতিরিক্ত শুল্ক হ্রাস বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়েছে মাত্র।
এদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় তিনি সহজে ছাড় দেবেন না।
হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা লেভিট জানান, ট্রাম্প নিজেই কোন দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় যাবেন তা নির্ধারণ করেন, এটাই প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েন্ডি কাটলার জানান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে পাঠানো চিঠিগুলো অন্য দেশগুলোর জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেও কাজ করবে।
তিনি আরও বলেন, এই দুই দেশ বহু বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অংশীদার ছিল, এবং তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে বড় অঙ্কে বিনিয়োগ করেছে।
চুক্তির আভাস ও বাজার ধস
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও কয়েকটি বাণিজ্যচুক্তি ঘোষণা করা হবে।
তবে ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক হুমকির কারণে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। নাসডাক সূচক ০.৯ শতাংশ এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এ ছাড়া ব্রিকস জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করছে—এমন দেশগুলোর ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেন, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণ করছে এবং যুক্তিবহির্ভূতভাবে তাঁর শুল্কনীতির সমালোচনা করছে।
তবে শেষ মুহূর্তে এখনো অনেক দেশ ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক এড়াতে জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন গত রোববার ট্রাম্পের সঙ্গে একটি গঠনমূলক বাণিজ্য আলোচনা করেছেন।