পা চাটা নয়, পাল্টা হামলা—যুদ্ধ ডাকছে, আলোচনার দরজায় তালা
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আগুনে যেন আরেকবার ঘি ঢালা হলো। বুধবার রাতভর ইরান ও ইসরায়েল আবারও একে অপরকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র এবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। পাল্টা জবাবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির ওপর সরাসরি হামলা চালিয়েছে। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নতুন করে হামলার বিস্তারিত প্রকাশ করেনি।

এই টানাপোড়েনের মাঝেই মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন—“আমি এই যুদ্ধে যোগ দিতেও পারি, নাও দিতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে চাই।” ট্রাম্পের এই মন্তব্য আরও ধোঁয়াশা তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক কূটনীতির আঙিনায়।

তবে ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, ইরানের কিছু আলোচক হোয়াইট হাউজে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের কূটনৈতিক মিশন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা স্পষ্ট ভাষায় জানায়, “কোনো ইরানি কর্মকর্তাকে পা চাটার জন্য হোয়াইট হাউজের দরজায় বসে থাকতে বলা হয়নি।”

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

তবে কথার লড়াইয়ের পাশাপাশি বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রেও বড় ধ্বংসের আলামত দেখা যাচ্ছে। উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সারের স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে, ইরানের তাবরিজে অবস্থিত ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির অন্তত নয়টি ভবন এবং দুটি সংযোগ টানেল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ভবনটিও ধ্বংস করা হয়েছে, যা দেশটির দমনমূলক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল বলে দাবি তার।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি এই পরিস্থিতিতে সরাসরি টেলিভিশনে আসেননি, তবে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারে তার একটি বিবৃতি পাঠ করে শোনানো হয়। সেখানে তিনি বলেন, “ইরান আত্মসমর্পণ করে না। এই জাতির ইতিহাস যারা জানে, তারা হুমকির ভাষায় কথা বলে না।”

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের দুটি সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ। পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য এসব সেন্ট্রিফিউজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের মধ্যেও চলছে দ্বিধা ও মতপার্থক্য। মার্কিন কংগ্রেসের প্রভাবশালী সিনেটর টিম কেইন বলেন, “আমি সবসময় ইসরায়েলকে সমর্থন করেছি। কিন্তু এবার আমি ইরানে হামলার প্রশ্নে আমেরিকার পাশে দাঁড়ানোর বিরোধিতা করছি।”

তার ভাষায়, “ইসরায়েল নিজেদের রক্ষা করুক, কিন্তু আমাদের এই যুদ্ধে টেনে আনবে না। কারণ আমেরিকা জড়ালে ইরান মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানবে—এটি শুধু সম্ভাবনা নয়, একটি ঘোষণা।”

সেনেটর কেইনের মতে, যুদ্ধ ঘোষণা কেবল কংগ্রেস করতে পারে, এবং এখন পর্যন্ত সেখানে এ নিয়ে কোনো প্রস্তাব ওঠেনি। অর্থাৎ আমেরিকান জনগণ এখনই যুদ্ধ চায় না।

এর মধ্যেই বুধবার রাতে ফোনে কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানান, ‘অপারেশন সিন্দুর’ এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা ছিল আলোচনার মূল বিষয়। পরে ট্রাম্প দাবি করেন, গত মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ তিনি নিজেই ঠেকিয়েছেন।