
গতকাল বুধবার সকাল থেকেই রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ অঞ্চলে আষাঢ় মাস শুরু হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। অথচ গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এমন ধারাবাহিক বৃষ্টির ঘটনা বিরল। গত বছর আষাঢ়জুড়ে মাত্র একদিন বৃষ্টি হয়েছিল, ২০২৩ সালে তিনদিন, ২০২২ সালে চারদিন, ২০২১ সালে ছয়দিন এবং ২০২০ সালে পাঁচদিন বৃষ্টি হয়েছিল। এবারের মতো টানা বৃষ্টির নজির সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেই বললেই চলে। তবে এই বৃষ্টি কোনো দিনই খুব বেশি ভারী হয়নি—আষাঢ়ের ২৬ দিনে মাত্র দুটি দিনে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২৫ মিলিমিটারের বেশি। যদিও প্রায় প্রতিদিনই অল্প-বিস্তর বৃষ্টি হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলে একটা লোককথা প্রচলিত রয়েছে—‘সারা বছরের খরা, এক দিনের ঝরা’। আগে এমন হতো যে এক দিনের ভারী বৃষ্টিতেই খাল-বিল, পুকুর-ডোবা পানি ভরে যেত। সেই সময় হলুদ ব্যাঙ বেরিয়ে এসে গা ফোলানোর শব্দে মুখরিত করত পরিবেশ। কিন্তু এখন সেই চিত্র আর চোখে পড়ে না।
চারঘাট উপজেলার ভয়ালক্ষ্মীপুর গ্রামের ষাট বছরের অটোরিকশাচালক হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর ভারী বৃষ্টির একদিন তিনি কিছু ব্যাঙ দেখেছেন। তবে আগের মতো ব্যাঙের ডাক আর শোনা যায় না। বাঘা উপজেলার পাঁচপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিজ উদ্দিন বলেন, চৈত্র মাসে একদিন ভারী বৃষ্টি হয়েছিল, তখন কয়েকটি ব্যাঙ দেখেছিলেন। তবে এখন প্রতিদিন বৃষ্টি হলেও ডোবা-নালা শুকনোই পড়ে আছে, ব্যাঙের কোনো সাড়া নেই। বড়াল নদীও প্রায় শুকিয়ে গেছে; শুধুমাত্র চারঘাট স্লুইসগেটের সামনে কিছু পানি রয়েছে। জেলার কোথাও বড় জলাশয়গুলোতে আগের মতো পানি নেই।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এবারের আষাঢ়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চতুর্থ দিনে—৪৭ মিলিমিটার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি ছিল নবম দিনে—৪০ মিলিমিটার। কিন্তু এরপর থেকে ভারী বৃষ্টি আর হয়নি।
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক শিক্ষক ও জলবায়ু পর্যবেক্ষণকারী জাহাঙ্গীর শাহ জানান, গত ১৩ বছর ধরে তিনি আবহাওয়ার তথ্য সংরক্ষণ করছেন। তাঁর মতে, এবারের আষাঢ়ের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে, তবে তা ভারী নয়। আগে বৃষ্টি শুরু হলে তা একটানা কয়েক দিন চলত। লোকমুখে প্রচলিত ছিল—‘শনিতে সাত, মঙ্গলে তিন’। অর্থাৎ শনিবার শুরু হলে সাত দিন এবং মঙ্গলবার শুরু হলে তিন দিন চলত বৃষ্টি। এমন বৃষ্টিতে পুকুরের মাছ পর্যন্ত উপচে পড়ত। এখন আর এমন দৃশ্য নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান জানান, আগের কয়েক বছর এল-নিনো প্রভাবের কারণে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত কম ছিল। তবে এবার এর ঠিক উল্টো অবস্থা দেখা যাচ্ছে, যার কারণ হলো লা-নিনা প্রভাব। গত বছরের তুলনায় এ বছর এই সময়ের আবহাওয়া অনেকটা শীতল। নিয়মিত বৃষ্টির কারণেই তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। প্রতিদিন বৃষ্টি হলেও তার প্রকৃতি বদলে গেছে—তা আর আগের মতো উপকারী বা ব্যবহারযোগ্য নয়।