জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সক্রিয় সরকার, আলোচনা পর্যায়ে বিএনপি
ছবিঃ সংগৃহীত

ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে চায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই আন্দোলনকেই 'জুলাই ঘোষণাপত্র' হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিতি দেওয়া হয়।

সরকারি ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া ইতোমধ্যে বিএনপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকার চায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে আগামী ৫ আগস্টের আগেই এই ঘোষণাপত্রকে চূড়ান্ত রূপ দিতে।

এই খসড়া প্রস্তুতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে। তিনিই বিএনপির নিকট খসড়াটি প্রেরণ করেন। সূত্র অনুযায়ী, সরকার খসড়ায় আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, তাই দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটি এই বিষয়টি নিয়ে দুই দিনব্যাপী আলোচনা করেছে। দলীয় এক সদস্যের ভাষ্য অনুযায়ী, খসড়ায় ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের পর থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত উল্লেখ থাকলেও, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো অনুপস্থিত। বিএনপি এইসব ঘটনাকে সংযোজনের পক্ষে।

তারা এটাও মনে করে, খসড়ায় ব্যবহৃত কিছু শব্দ বা ভাষাগত প্রয়োগে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা থাকতে পারে, যা সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে, কীভাবে এ অঞ্চলের মানুষ যুগ যুগ ধরে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে এবং কীভাবে ২০২৪ সালে ছাত্র ও জনতার সম্মিলিত আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটে। এতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তার ভারতগমন, সেইসঙ্গে সে সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের কথাও বলা হয়।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ৩১ ডিসেম্বর একটি 'জুলাই ঘোষণাপত্র' তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে তারা সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। এরপর বিষয়টি রাজনৈতিক আলোচনায় ফিরে আসে, বিশেষত যখন ১২ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারকে এ বিষয়ে প্রস্তাব জমা দেয়। তবে প্রায় পাঁচ মাস এই বিষয়ে সরকারের তরফে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “ঘোষণাপত্র একটি রাজনৈতিক দলিল হতে পারে যা আর্কাইভে সংরক্ষণযোগ্য। তবে এটি সাংবিধানিক চতুর্থ তফসিলে স্থান পেতে পারে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।”

এছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান সংলাপে সংবিধান সংস্কার, জাতীয় নিরাপত্তা এবং নারীদের সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব সংক্রান্ত নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৫০ থেকে ১০০ তে উন্নীত করার ব্যাপারে সম্মত হলেও, নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।

সভায় যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।