ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যু সংবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি প্রধান ফটক থেকে গোলচত্বর হয়ে বিজয় ২৪ হল পর্যন্ত পদযাত্রা করে পুনরায় প্রধান ফটকে গিয়ে শেষ হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা “আমার ভাই, তোমার ভাই– হাদি ভাই, হাদি ভাই।”, “জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ– শহীদ হাদি জিন্দাবাদ।”, “এক হাদি লোকান্তরে–লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে, পেতে চাইলে মুক্তি– ছাড়ো ভারত ভক্তি, ভারতীয় আধিপত্যবাদ–ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও, গুলামি না আজাদী – আজাদী, আজাদী, দিল্লি না ঢাকা– ঢাকা, ঢাকা ”, “লাল-সবুজের পতাকায়, হাদি তোমায় দেখা যায়” ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মিছিল শেষে প্রধান ফটকে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইনকিলাব মঞ্চ কুবির আহ্বায়ক হান্নান রহিম লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রশিদুল ইসলাম শেখ, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী, মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু ওবায়দা রাহিদ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অমিত দত্তকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
এতে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অবছার উদ্দিন ইফতি বলেন, 'হাদির কণ্ঠস্বর ছিল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার কণ্ঠস্বর, জনগণের পক্ষের কণ্ঠস্বর এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধের কণ্ঠস্বর। হাদির কণ্ঠস্বরকে আমাদের পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্তি চাই। যাতে আগামীর প্রজন্ম ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদ সম্পর্কে জানতে পারে।'
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব হোসাইন বলেন, 'আমার এইখান থেকে দুইটি দাবি জানাতে চাই। বাংলাদেশের আঁতুড়ঘর শাহবাগকে হাদি চত্বর হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। সংসদ ভবনে হাদির লাশ দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে সংসদে যাওয়ার পথে প্রত্যেকটা এমপি-মন্ত্রী হাদিকে স্মরণকরে বক্তব্য রাখে।'
ছাত্র শিবির কুবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন আবির বলেন, 'শরীফ উসমান হাদি শহীদ হয়েছেন ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে। যেসব সুশীলরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চাচ্ছে তাদেরকে বলতে চাই আপনারা সতর্ক হয়ে যান। যে সকল লীগের সন্ত্রাসীরা জুলাই আন্দোলনের সময় আমাদেরকে হুশিয়ারি দিয়েছিল তারা আজও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিচার নিশ্চিত করেনি এখনো। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই অতিদ্রুত যদি লীগের বিচার না করেন তাহলে আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিব।'
তিনি আরও বলেন, ' আমাদের যে নতুন ক্যাম্পাস হবে সেখানে ওসমান হাদির নামে একটা হল হবে। এটা আমাদের প্রাণের দাবি।'
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, 'ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কবর রচনা করে হাদি ভাইয়ের জীবন দেওয়াকে আমরা সার্থক করে তুলবো, ইনশাল্লাহ। বাংলাদেশের অরাজকতা সৃষ্টি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মূল মদদদাতা হচ্ছে ভারত। হাদির মেইন খুনি ফয়সালকে ভারত থেকে এনে বিচার করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'হাদি ভাই একটা কালচারাল সেন্টার তৈরি করেছেন। আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান করবো বাংলাদেশের প্রতিটা জেলায়, প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার এবং লীগ বিরোধী মঞ্চ তৈরি করে লীগকে সবসময় দৌড়ের উপর রাখতে হবে। আমাদের ক্যাম্পাসে এবং হলে এখনো যে সকল লীগের দোসরেরা বুক ফুলিয়ে চলতেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।'
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ওসমান হাদিকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

