কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় খাঁটি খেজুরের রসের কদর দিন দিন বাড়ছে। শীতের মৌসুমে প্রতিদিনই স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা ভিড় করছেন রস পান করতে। স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে সংগ্রহ করায় এই খেজুরের রস নিয়ে ক্রেতাদের আস্থা বেড়েছে।
উপজেলার ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা বিদ্যাবাগিস গ্রামের গাছি ইদ্রিস আলী (৬৭) খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন বিশেষ কৌশলে। তিনি জানান, খেজুর গাছে নেটের জাল ও বাঁশের তৈরি চট্টি ব্যবহার করে রস সংগ্রহ করা হয়। ফলে বাঁদুর কিংবা বিভিন্ন পাখি রসের কলসে মুখ দিতে পারে না। এতে খেজুরের রস সম্পূর্ণ নিপা ভাইরাসমুক্ত থাকে বলে দাবি করেন তিনি।
গাছি ইদ্রিস আলী বলেন, “খাঁটি খেজুরের রস পান করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। এক গ্লাস রস ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং এক লিটার রস ১০০ টাকা দরে বিক্রি করি। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা বিক্রি হয়। এতে করে সংসার চলে।”
ইদ্রিস আলীর বাড়ি বিদ্যাবাগিস গ্রামে হলেও বর্তমানে তিনি স্ত্রী ও নাতিসহ ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের কবিরমামুদ এলাকায় অবস্থান করছেন। সেখানে একরামুল হকের কাছ থেকে ২৪টি খেজুর গাছ লিজ নিয়ে রস সংগ্রহ করছেন। প্রতিটি গাছের লিজ মূল্য ৫০০ টাকা। রস ও গুড় বিক্রিই তার প্রধান জীবিকা। রসের মৌসুম শেষ হলে তিনি কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালান।
খেজুর গাছের মালিক একরামুল ইসলাম জানান, “প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ইদ্রিস আলী ও তার নাতি নাজমুল আমাদের গাছ লিজ নিয়ে রস ও নালি গুড় তৈরি করছেন। তার সংগ্রহ পদ্ধতি স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে রস পান করেন এবং পরিবারের জন্য নিয়ে যান।”
লালমনিরহাটের গোকুন্ডা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও তার বন্ধু ফজলুর রহমান জানান, ব্যবসায়িক কাজে ফুলবাড়ীতে এসে খেজুরের রসের খবর পান। তারা দু’জনই রস পান করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ফজলুর রহমান বলেন, “রসটি খুবই সুস্বাদু ও টাটকা।”
স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াছিন আলী ও ফিরোজ মিয়া বলেন, “ইদ্রিস চাচার রস সংগ্রহের কৌশল খুবই ভালো। এই পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ করলে নিপা ভাইরাসের কোনো ঝুঁকি থাকে না। সকাল, সন্ধ্যা এমনকি রাতেও মানুষ গাছের টাটকা রস পান করছেন।”
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন জানান, উপজেলায় প্রায় ৯শ’ খেজুর গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে কেউ রস বিক্রি করছেন, আবার কেউ গুড় তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি বলেন, “কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে খেজুর গাছ রোপণে কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

