
বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জনবল সংকট আজ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে পুরো হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম, যেখানে প্রয়োজন ১৮ জন চিকিৎসক। এর ফলে প্রতিদিন শত শত রোগীকে পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।
প্রতিদিন গড়ে ৩০০-এর বেশি রোগী সেবা নিতে আসে, অথচ বহির্বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন মাত্র একজন চিকিৎসক। এতে রোগীরা চিকিৎসা পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। দিলালপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আবু তাহের মিয়া বলেন, “একজন ডাক্তার দিয়ে এত রোগীর সেবা সম্ভব নয়, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি।”
অবস্থার আরও করুণ চিত্র দেখা যায় আলট্রাসনোগ্রাফি বিভাগে। সনোলজিস্ট না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুস সালেহীন নিজেই প্রতিদিন ২০ জন রোগীর আলট্রাসনোগ্রাফি করছেন। অথচ প্রতিদিন প্রয়োজন হয় ৬০-৭০ জন রোগীর পরীক্ষা।
ল্যাব টেকনিশিয়ান রঈস উদ্দিন বলেন, “আমি একাই প্রতিদিন ৬০-৭০ জন রোগীর টেস্ট করার চেষ্টা করছি, যা শারীরিকভাবে খুবই কষ্টসাধ্য।”
এক্স-রে মেশিন থাকলেও কোনো টেকনিশিয়ান না থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না — বহুদিন ধরেই মেশিনটি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। নার্স সংকট না থাকলেও রয়েছে তাদের আবাসন সমস্যা। নার্সদের জন্য নির্ধারিত আবাসন অপর্যাপ্ত ও জরাজীর্ণ হওয়ায় তারা থাকতে পারছেন না।
এদিকে হাসপাতাল ভবনের ছাদ ও পলেস্তারা ভেঙে পড়ার ঘটনাও ঘটছে। কিছুদিন আগে নার্স স্টেশনের কর্মরতদের উপরে চলন্ত ফ্যান খুলে পড়েছিল বলে জানান ডা. নাজমুস সালেহীন।
তবে আশার খবর হচ্ছে, দীর্ঘ ৮ মাস পর আবার চালু হতে যাচ্ছে সিজারিয়ান অপারেশন। ডা. সালেহীন জানান, “প্রতি সপ্তাহে রবিবার একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ এসে অপারেশন করবেন। এতে অন্তত কিছুটা হলেও প্রসূতি মায়েদের ভোগান্তি কমবে।”
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কিশোরগঞ্জ জেলার সহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান জানান, “ভবনের সংস্কারের জন্য প্রাক্কলন তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করছি আগামী মাসের মধ্যেই দরপত্র আহ্বান করে কাজ শুরু করা যাবে।”
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন বলেন, “বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংকটের বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আশা করছি মাসের শেষে কিছুটা উন্নতি দেখা যাবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, বাজিতপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিশোরগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হলেও বছরের পর বছর ধরে এখানে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা দ্রুত এই সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেছেন।