প্রতিশ্রুতি ভাঙার ইতিহাস, প্রশ্নবিদ্ধ বাস্তবতা, কোথায় দাঁড়াবে ডাকসু ২০২৫?
ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছাত্র সংসদ ডাকসু। কিন্তু এই নির্বাচন ঘিরে ইতিহাসে যা ঘটেছে, তা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার চেয়ে বরং হতাশার বড় অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।




১৯৯৮ সালে শেষ ডাকসু কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর কর্তৃপক্ষ মাত্র ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিল। আশ্বাস ছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। সময় গড়িয়েছে, শিক্ষার্থীরা পথে নেমেছেন, আন্দোলন করেছেন, সিনেটে প্রস্তাবও উঠেছে—তবু ডাকসু নির্বাচন ছিল অধরাই।




২০০৫ সালে আবারও আশার আলো জ্বলে ওঠে। ঘোষণা দেওয়া হয় ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু ছাত্রলীগের তীব্র আপত্তি ও প্রতিরোধের মুখে সেই প্রক্রিয়াও থমকে যায়। বিপরীতে ছাত্রদল আন্দোলনে নামলেও তাদের দাবিও হারিয়ে যায় রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ভিড়ে।




সময় গড়াতে গড়াতে ২০১২ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই নতুন করে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন। কালো পতাকা মিছিল, ধর্মঘট, ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন—সবকিছুর মধ্যেই ফুটে ওঠে তাদের হতাশা ও ক্ষোভ। এমনকি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’ গড়ে তোলা হয় আন্দোলনকে সংগঠিত করতে। কিন্তু শ্লোগান আর পদযাত্রা যত জোরালই হোক, নির্বাচন আয়োজনের বাস্তব প্রতিশ্রুতি আসেনি।



দীর্ঘ দুই দশক পর, অবশেষে ২০১৯ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। তবে নির্বাচনী ফলাফল ও প্রক্রিয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়, তাতে শিক্ষার্থীদের বহুল প্রতীক্ষিত এই ভোট গণতন্ত্রের উৎসব নয়, বরং “প্রশ্নবিদ্ধ অধ্যায়” হিসেবেই থেকে যায়। ছাত্রলীগের প্রভাবশালী উপস্থিতি এবং বিরোধী প্রার্থীদের নানা অভিযোগ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।



ডাকসুর ইতিহাস তাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, রাজনৈতিক স্বার্থ ও বিতর্কিত বাস্তবতার এক দীর্ঘ কাহিনি। শিক্ষার্থীদের চোখে এটি কেবল একটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি অব্যাহত প্রশ্নচিহ্ন।



সবশেষে বিপ্লব পরবর্তী সময় ২০২৫ এর আজকের দিনে আবারও নানান জল্পনা কল্পনার ইতি ঘটিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। এখন দেখার বিষয় ডাকসু কি এবার নতুন ধারার সূচনা করবে নাকি আবারও ঘটবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি!