জিআই স্বীকৃতি পেল নেত্রকোণার ঐতিহ্যবাহী ‘বালিশ মিষ্টি’
ছবিঃ বিপ্লবী বার্তা

নেত্রকোণার ঐতিহ্যের ধারক শতবর্ষী ‘বালিশ মিষ্টি’ অবশেষে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি) মিষ্টান্নটিকে দেশের ৫৮তম জিআই পণ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।


জেলা সদরের বারহাট্টা রোডের গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার বালিশ মিষ্টির একমাত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক গয়ানাথ ঘোষ ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রথম এ মিষ্টি তৈরি করেন। ছোট বালিশের মতো লম্বাটে ও তুলতুলে আকৃতির কারণে তিনি নাম দেন ‘বালিশ মিষ্টি’। পরবর্তীতে এটি ‘গয়ানাথের বালিশ’ নামেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।


কারিগরদের মতে, খাঁটি গাভির দুধের ছানা, চিনি ও সামান্য ময়দা মিশিয়ে প্রথমে মণ্ড তৈরি করা হয়। এরপর বালিশ আকৃতির মিষ্টি ভেজে চিনির গরম রসে ডোবানো হয়। পরে ঠান্ডা করে আবার রসে ভিজিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। বিক্রির সময় এর ওপর ক্ষীরের প্রলেপ বা দুধের মালাই দেওয়া হয়, যা ক্রেতাদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ যোগ করে।


অতুলনীয় স্বাদের কারণে খুব দ্রুতই বালিশ মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। বিয়ে, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, বড়দিন কিংবা নববর্ষ সব ধরনের উৎসবেই এর চাহিদা ব্যাপক। নেত্রকোণাসহ আশপাশের জেলার মানুষ ছাড়াও দেশজুড়ে ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীরা নেত্রকোণায় এসে এ মিষ্টির স্বাদ গ্রহণ করে থাকেন।


দুই বছর আগে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ডিপিডিটিতে বালিশ মিষ্টিকে জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। পণ্যের ইতিহাস, উৎপাদন প্রক্রিয়া ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য সংবলিত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে অবশেষে মেলে কাঙ্ক্ষিত স্বীকৃতি।


গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বর্তমান কর্ণধার বাবুল চন্দ্র মোদক বলেন, “বালিশ মিষ্টি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। একশো বছরেরও বেশি আগে যে মিষ্টির সূচনা হয়েছিল, তা আজ দেশের গৌরবের প্রতীকে পরিণত হলো। আমরা এর গুণাগুণ অক্ষুণ্ন রেখে এই ঐতিহ্য ধরে রাখবো।”


জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, “আমরা বালিশ মিষ্টিকে জিআই ঘোষণার জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে এর অনুমোদন হয়ে গেছে। অফিশিয়াল সার্টিফিকেট পেলেই আমরা গ্রহণ করবো এবং আনন্দ উদযাপন করবো। এর আগে বিজয়পুরের সাদামাটি জিআই স্বীকৃতি পেয়েছিল। ভবিষ্যতে জেলার অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী পণ্যও তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করা হবে।”


এর আগে ২০২১ সালে নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের সাদামাটি জিআই স্বীকৃতি পেয়েছিল। এবার ‘বালিশ মিষ্টি’ সেই তালিকায় যুক্ত হওয়ায় জেলার জন্য এটি নতুন এক গৌরবের অর্জন।