হিরের আলোয় রাত জাগা এক নিলাভ দ্বীপ, সেন্টমার্টিন
ছবিঃ সংগৃহীত

রাত নেমেছে সেন্ট মার্টিনে। আকাশে নক্ষত্রের ঢেউ, আর  সেই ঢেউ যেন নেমে এসেছে সমুদ্রের তীরেও। বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে ভেসে আসে সমুদ্রের হিল্লো্ল , আর তার সাথে ঝলসে ওঠে অসংখ্য নীল আলো, যেন সমুদ্রের বুক জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অগণিত নিলাভ হিরে।


রাতের আধারে সেন্টমার্টিনের তীরে হাঁটতে নামলে হুট করে আপনার মনে হতেই পারে, সমুদ্র জ্বলছে নীল আগুনে! কিন্তু সেই আগুনের নেই তাপ, নেই কোন উষ্ণতা। সেই আগুন স্নিগ্ধ শীতল। পর্যটকদের চোখে এ আলো যেন নক্ষত্রের সমুদ্র, যেখানে প্রতিটি ঢেউ বয়ে আনে মুগ্ধতা। 


 কেউ একে বলে স্বর্গের আলো আবার কেউ বলে প্রকৃতির গোপন নিশ্বাস। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, এর নাম বায়োলুমিনিসেন্স।


সমুদ্রের এই নীল আলোর জাদু তৈরি করে ডাইনোফ্ল্যাজেলেট নামক ক্ষুদ্র এককোষী প্রাণী। সূর্যের আলো নয়, বরং নিজেদের ভেতরের রাসায়নিক শক্তি থেকেই এরা জন্ম দেয় এই স্নিগ্ধ  আলো। লুসিফেরিন রাসায়নিক যৌগ আর লুসিফারেজ এনজাইম এর সংযোগে, অক্সিজেনের উপস্থিতিতে  রাসায়নিক শক্তি পরিণত হয় আলোকশক্তিতে। আর এভাবেই অন্ধকারের বুক চিরে জ্বলে ওঠে জীবনের নীল দীপ্তি। এক আলোকস্রোত, যেখানে নেই কোনো তাপ, আছে শুধু মুগ্ধতা, রহস্য আর জীবন।


তবে এই আলো দেখতে হলে আপনাকে করতে হবে অপেক্ষা।  কারন এই আলোর দেখা মেলে অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যবর্তী সময়ে। বাংলাদেশে সেন্ট মার্টিনের আশেপাশে জোয়ার-ভাটার স্রোতে এই আলোকজীবেরা তৈরি করে পৃথিবীর অন্যতম মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ‘ব্লু ওয়েভ ফেনোমেনন’।



কিন্তু প্রকৃতির নিয়মের বিপরীত আচরণ যেমন সব কিছুকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে নেয় ঠিক তেমনি ভাবে এই আলোর জাদুও হার মানছে মানুষের প্রকৃতি বিরোধী কর্মকাণ্ডের কাছে । সমুদ্র দূষণ, প্লাস্টিক বর্জ্য আর অতিরিক্ত কৃত্রিম আলো ধীরে ধীরে নিভিয়ে দিচ্ছে এই নীল প্রদীপগুলো। প্রকৃতি যেন শেষবারের মতো আমাদের চোখে ধরা দিচ্ছে তার সৌন্দর্যকে এক  অন্তিম সতর্কবার্তা হিসেবে। 


সেন্ট মার্টিনের এই নীল আলো শুধু সৌন্দর্য নয় , এটি এক জীবনের সঙ্কেত,  প্রকৃতির এক গোপন বার্তা—যে, যতদিন আমরা তার প্রতি যত্নবান, ততদিন সে আমাদের আলো দিয়ে যাবে,
নিঃশব্দে, নিঃশেষে, অন্তহীন নীলতায়।

তাই নিজেদের প্রয়োজনে, পৃথিবীর প্রয়োজনে প্রকৃতিকে বাঁচানোর এই মহান দায়িত্ব নিতে হবে আমাদেরকেই। মনে রাখতে হবে প্রকৃতির ধ্বংস মানেই ধ্বংস আমাদের ও ধ্বংস ধরণীর।