 
      জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে—এই ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এখন সেই অনুযায়ী মাত্র ১০ মাস সময় হাতে রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তুতি কতটা এগিয়েছে, কিংবা কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
ইসির সূত্র বলছে, ঈদুল আজহার ছুটির কারণে কমিশনের ভেতরে এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়নি। তবে আগামী রোববার থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ বা বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করবে ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের জন্য বড় যেসব প্রস্তুতি প্রয়োজন তার মধ্যে রয়েছে—ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয়, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকা তৈরি। এদের মধ্যে বেশিরভাগ কাজই তফসিল ঘোষণার আগে সম্পন্ন করতে হয়।
গত শুক্রবার ঈদ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জানান, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে নির্বাচন সংক্রান্ত বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রকাশ করবে।
নির্বাচন কমিশনের বর্তমান নেতৃত্ব, যার প্রধান কে এম নাসির উদ্দীন, তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই নির্বাচন নিয়ে নিয়মিত প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে আসছেন। আগে ইসির পরিকল্পনা ছিল, ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে জুলাইয়ের মধ্যে একটি প্রাথমিক রোডম্যাপ ঘোষণা করা। তবে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার ফলে তারা কিছুটা বাড়তি সময় পাচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ঘোষণার পর ছুটি থাকায় কমিশনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তবে রুটিন কাজগুলো চলমান রয়েছে। ছুটি শেষে কমিশন আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।
প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো—ভোটার তালিকা হালনাগাদ। ভোটার তালিকা আইনে বলা আছে, প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত হালনাগাদ করা যায়। বর্তমানে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি যাঁদের বয়স ১৮ হবে, এমন ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬০ লাখ নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং প্রায় ২০ লাখ মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হবে। এদের নাম চূড়ান্তভাবে তালিকায় যোগ হবে ২০২৫ সালের ২ মার্চ।
যদি নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে হতো, তাহলে অনেক নতুন ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। তখন ভোটার বয়স সংশোধন করে আইন পরিবর্তনের চিন্তা ছিল। কিন্তু এপ্রিল নির্বাচন হলে তেমন প্রয়োজন পড়বে না।
এ ছাড়া নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, আসন পুনর্বিন্যাস, আচরণবিধি সংশোধনসহ বিভিন্ন আইনি সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী জুলাই মাসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি সমঝোতা প্রস্তাব তৈরি করতে চায়। এরপর আগস্ট নাগাদ আইন সংস্কার চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের চূড়ান্তকরণ তফসিল ঘোষণার পর করা হবে। এ দায়িত্ব সাধারণত জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীরা পালন করেন।
নির্বাচনী বিষয়ে বিশ্লেষক এবং ‘সুজন’-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এখন বাড়তি সময় পাওয়ায় তাদের আরও সুচিন্তিতভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করে অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।
 নিজস্ব প্রতিবেদক
                     নিজস্ব প্রতিবেদক 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                
