 
      চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এসব অস্ত্র দিয়ে ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ ঘটানো হচ্ছে। পুলিশের মধ্যেও থানা থেকে অস্ত্র লুট হওয়ার পর তাদের বিক্রিতে সংশ্লিষ্টতার খবর পাওয়া গেছে।
গত বছর ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনায় ৮১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪টি গুলি লুট হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এসবের অধিকাংশই এখনো উদ্ধার হয়নি। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম জানান, উদ্ধার কাজ চলছে, তবে কতটা অস্ত্র পাওয়া গেছে তা স্পষ্টভাবে বলতে পারেননি।
গত ২১ জুলাই চান্দগাঁও এলাকায় আধিপত্য নিয়ে সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পো এবং শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইসার বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়, যার ফলে কেউ হতাহত হয়নি। পরে পুলিশ শহিদুলের একটি আস্তানায় থানা থেকে লুট হওয়া দুটি অস্ত্র ও গুলির খোসা উদ্ধার করে। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন জানান, সেই ফ্ল্যাটটি সন্ত্রাসীরা টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করত এবং সেখানে লোকজনকে আটক করে নির্যাতন করা হতো।
গত ২৯ আগস্ট বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানার সীমানা এলাকায় মাসুদ কায়সার ও মো. আনিসকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত গুলির খোসা থানা থেকে লুট হওয়া বলে নিশ্চিত করেছে। নিহত আনিসের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ পুলিশি অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের হত্যা করেছে। সাজ্জাদ বর্তমানে কারাগারে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
৩ মার্চ সাতকানিয়ায় একটি সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ধারকৃত পিস্তলটি কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হওয়া ছিল। পুলিশ জানায়, নিহত নেজাম উদ্দিন ওই পিস্তল নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন এবং সেই অস্ত্র দিয়েই গুলি চালানো হয়।
ডবলমুরিং থানায় গত ১৭ এপ্রিল গ্রেপ্তার আরিফ হোসেনের কাছ থেকে ইতালির তৈরি একটি পিস্তল ও ৫০টি গুলি পাওয়া গেছে, যা ওই থানা থেকে লুট হওয়া। আরিফ একজন ডাকাত দলের নেতা ও বহু মামলার আসামি। তিনি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি করতেন। ২৫ জানুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানা এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে আরও অস্ত্র ও গ্রেপ্তারকৃতদের উদ্ধার করে, যাদের মধ্যে সবাই থানা থেকে লুট করা অস্ত্র নিয়ে অপরাধ করছিল।
নগরের কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র নিয়ে গত ১৭ জুন মো. রুবেল নামে এক ভ্যানচালককে গ্রেপ্তার করা হয়।
অস্ত্র লুট ও কেনাবেচায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও এসেছে। ৩ মার্চ সাতকানিয়া থেকে উদ্ধার হওয়া একটি পিস্তল বিক্রির সঙ্গে চাঁদপুরে কর্মরত কনস্টেবল রিয়াদের নাম জড়িত ছিল। রিয়াদকে গ্রেপ্তার করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার পাশাপাশি অন্যান্য আসামিরাও অস্ত্র কেনাবেচায় জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী এ বিষয়কে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে বলেছেন, যদি থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গুলির উদ্ধারে বিশেষ অভিযান না চালানো হয় এবং প্রয়োজনীয় মনোযোগ না দেওয়া হয়, তাহলে তা জননিরাপত্তা, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
 নিজস্ব প্রতিবেদক
                     নিজস্ব প্রতিবেদক 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                
