 
      বিরাট কোহলি—একটি নাম, একটি অধ্যায়, একটি আবেগ। ২০০৮ সাল থেকে আইপিএলে পথচলা শুরু হলেও সেই পথটা ছিল কাঁটায় ভরা। একের পর এক ব্যর্থতা, ফাইনালে গিয়ে হার, বহু সমালোচনা, নেতৃত্ব হারানো—সব কিছুর পরেও হাল ছাড়েননি তিনি। আর ঠিক সেই কারণেই আইপিএল ২০২৫-এর এই ট্রফি শুধুই আর একটি কাপ নয়, এটি বিরাট কোহলির জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের বাস্তব রূপ।
১৮ বারের চেষ্টায়, চতুর্থ ফাইনালে এসে অবশেষে এল কাঙ্ক্ষিত সেই শিরোপা। আর সেই মুহূর্তটি ঠিক যেন সিনেমার দৃশ্য। জশ হ্যাজলউড যখন ফাইনালের শেষ বলটি করলেন, তখন ডাগআউট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কোহলি দুই হাত তুলে ধরলেন আকাশের দিকে। তাঁর চোখে তখন জল—সফলতার, স্বস্তির এবং সীমাহীন ভালোবাসার।
বেঙ্গালুরু এ দিন টসে হেরে ব্যাট করতে নামে। শুরুটা ছিল বেশ ধীরগতির। বিরাট কোহলি ইনিংস গুছিয়ে খেললেও স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ১২৩, রান করেন ৪৩। পাঞ্জাবের বোলাররা তাঁকে বারবার পরীক্ষায় ফেলেন—স্লোয়ার, বাউন্সার আর অফস্টাম্পের বাইরে রাখা বল দিয়ে আটকে রাখার চেষ্টায় সফলও হন অনেকটা।
তবে কোহলি একপাশ ধরে রাখেন, আর রান বাড়ানোর কাজটা সারেন বাকিরা। রজত পতিদার, লিয়াম লিভিংস্টোন, মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও জিতেশ শর্মা—চারজনই করেছেন ২০-এর বেশি রান। বিশেষ করে জিতেশের ১০ বলে ২৪ রানের ইনিংসটি ছিল সত্যিকারের ‘ইমপ্যাক্ট ইনিংস’। তাঁর তাণ্ডবেই মনে হয়েছিল বেঙ্গালুরু ২০০ ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু শেষ ওভারে অর্শদীপ সিং মাত্র ৩ রান দিয়ে সেই আশা গুড়িয়ে দেন।
শেষপর্যন্ত বেঙ্গালুরু থামে ৯ উইকেটে ১৯০ রানে। আহমেদাবাদের এই পিচে এটাই ছিল এবারের আইপিএলের ফাইনালে প্রথম ইনিংসে সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
জবাবে নামা পাঞ্জাব কিংসের ওপেনাররা শুরু থেকেই ধুঁকছিলেন। প্রভসিমরান সিং ও প্রিয়াংশ আর্য ছিলেন বেশ সতর্ক। তাঁদের ২২ ও ১৯ বলে করা ২৬ ও ২৪ রানের ইনিংসগুলো ম্যাচের গতিপথেই ব্যাঘাত ঘটায়। সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেন নেহাল ওয়াধেরা—১৮ বলে মাত্র ১৫ রান করে পুরো চাপে ফেলে দেন দলের মিডল অর্ডারকে।
এক পর্যায়ে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন জশ ইংলিস। ২৩ বলে ৩৯ রান করে যখন ক্রুনাল পান্ডিয়ার বলে আউট হন, তখন পাঞ্জাবের দরকার ছিল ৪৭ বলে ৯৩ রান। তখনও ৭ উইকেট হাতে থাকলেও বাকি সময়টায় আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি তারা। ক্রুনাল পান্ডিয়ার ৪ ওভারে ১৭ রানে ২ উইকেট এবং অভিজ্ঞ ভুবনেশ্বর-হ্যাজলউড জুটি যেন পাঞ্জাবের স্বপ্ন চূর্ণ করে দেন।
শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাব থামে ৭ উইকেটে ১৮৪ রানে। জয় আসে ৬ রানে, তবে স্কোরবোর্ডের সেই ‘৬’ আসলে লুকিয়ে রাখে কত শত দিনের অপেক্ষা, ব্যর্থতার হতাশা আর অদম্য মানসিকতা।
ফাইনাল শেষে কোহলির চোখে জল, কিন্তু সেই জল ছিল এক অন্তরের মুক্তি। সেই মুহূর্তে গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার জন্য কোহলি যেন এক অনুপ্রেরণার নাম। তিনি দেখালেন, স্বপ্নে বিশ্বাস রাখলে, পরিশ্রম করলে এবং হাল না ছাড়লে একদিন সাফল্য এসে ধরা দেয়।
১৭ বছরের ক্লান্তিকর অপেক্ষা শেষে অবশেষে এল স্বপ্নের ছোঁয়া—এবার নিঃসংশয়ে বলা যায়, "বিরাট কোহলি আইপিএল চ্যাম্পিয়ন"।
 ক্রীড়া প্রতিবেদক
                     ক্রীড়া প্রতিবেদক 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                
