 
      ইসরায়েলের ১৩ জুনের হামলার পর ইরানের রাজধানী তেহরানে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ছন্দ হারিয়ে ফেলে। আতঙ্কে কেউ ঘরবন্দী, কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটেছে। ছোট্ট সন্তানকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে সাবওয়ে স্টেশনে রাত কাটিয়েছেন কেউ কেউ। এই টালমাটাল সময় ইরানের জেনারেশন জেড কীভাবে পার করেছে এই সময়—তা উঠে এসেছে আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তরুণ ইরানিরা তখন বাস্তব জগৎ থেকে ছিটকে গিয়ে ভার্চ্যুয়াল জগতে খুঁজেছে আশ্রয়। হোয়াটসঅ্যাপ, ডিসকর্ডসহ বিভিন্ন চ্যাটিং অ্যাপে গড়ে ওঠে অনলাইন আশ্রয়কেন্দ্র, যেখানে তারা ভাগ করে নেয় বেঁচে থাকার উপায়, মানসিক শক্তি এবং বন্ধুত্ব।
তেহরানে থাকা ২৪ বছর বয়সী এক আইটি শিক্ষার্থী, মোমো (ছদ্মনাম), জানান যে বোমা হামলা যে কোনো ভবনে হতে পারে—এমন আশঙ্কায় তিনি নিরাপদ ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না পাশের বাড়িতে কে থাকে। হতে পারে, সামরিক বাহিনীর কেউ। তা সত্ত্বেও আমি কোথাও যাব না। এটাই আমার ঘর, এখানেই থাকব।’
ইরানের ইন্টারনেট পরিস্থিতিও নিরাপদ ছিল না, কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন ছিল। তবুও জেন-জি তরুণেরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মেই নিজেদের নিরাপত্তা, সহানুভূতি ও সঙ্গ খুঁজে নেয়। ১২–২৭ বছর বয়সী এই প্রজন্মের সদস্যরা অনলাইন গেম, সিনেমা, এমনকি রাতের ঘুম পর্যন্ত একসঙ্গে কাটিয়েছেন ভার্চ্যুয়াল জগতে।
ডিসকর্ড অ্যাপ ইরানে ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে নিষিদ্ধ হলেও তরুণেরা ভিপিএন ও এনক্রিপশন ব্যবহার করে তাতে সক্রিয় ছিলেন। এ সময় প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ইরানি তরুণ গেম খেলতে ও সংযোগ রক্ষা করতে ব্যস্ত ছিলেন। যেমন ২৩ বছর বয়সী সামিন (ছদ্মনাম) বলছিলেন, তিনি হামলার সময় কল অব ডিউটি খেলছিলেন এবং প্রথমে বুঝতেই পারেননি, বিস্ফোরণটা গেম না বাস্তবে হচ্ছে।
এই তরুণদের অনলাইন উপস্থিতি ২০২২ সালের মাসা আমিনি হত্যাকাণ্ডের পর আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
এছাড়া, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছিল একটি ভার্চ্যুয়াল সহানুভূতির কেন্দ্র। ‘ইয়োগা ফর প্রেগন্যান্সি’ নামের একটি গ্রুপে যুক্ত ছিলেন তেহরানের অন্তঃসত্ত্বা নারী আমিনাহ ও জোহরা, যাঁরা একে অপরকে মনোবল জুগিয়েছেন। ভয় কাটানোর উপায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল, এমনকি গান বা মালিশের পরামর্শ দেওয়া হতো সেই গ্রুপে।
ইসরায়েল ও ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। কিন্তু এই সময় ইরানি তরুণদের প্রতিবাদ ছিল নিঃশব্দ, ডিজিটাল এবং মানবিক। সতর্কতা, আশ্রয়কেন্দ্র কিছু না থাকলেও তারা একে অপরকে মানসিক শক্তি ও সহানুভূতি দিয়ে বেঁচে থাকার কৌশল রচনা করেছে—একটি অব্যক্ত কিন্তু দৃঢ় বিদ্রোহ।
 আন্তর্জাতিক ডেস্ক
                     আন্তর্জাতিক ডেস্ক 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                
