জুলাই আন্দোলনের নেতা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটির খাসমহল এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা গেছে, নলছিটি পৌর শহরের খাসমহল এলাকায় হাদির গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। স্বজনরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না, হাদি আর নেই।
চিরপরিচিত হাদির মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা।আত্মীয়-স্বজন, অনুসারী, বন্ধু ও পাড়াপ্রতিবেশীরা এ সময় উপস্থিত অনেকেই হাদির সঙ্গে কাটানো স্মৃতি স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। হাদির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকাবাসীর দাবি, হাদিকে যারা গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তারা হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবিও জানান। হাদির মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবেশী ও সহপাঠীরা গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, 'জুলাই বিপ্লবের পর হাদির মতো একজন সাহসী ও সক্রিয় নেতাকে কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।'
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে হাদির মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরপরই দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সড়কে নেমে আসে স্থানীয়রা। শহরের কলেজ মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ঢাকা-ঝালকাঠি মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। এসময় সড়কের দুই পাশেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে রাত তিনটার সময় বিক্ষুব্ধরা সরে গেলে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল। তারা কলেজ মোড় এলাকাকে কে হাদী চত্ত্বর হিসেবে ঘোষণা করে।
তিন ভাই ও তিন বোনের পরিবারে ওসমান হাদি সবার ছোট। বাবা বিশিষ্ট আলেম মরহুম মাওলানা আব্দুল হাদি ছিলেন নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ।
তার বড় ভাই মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক বরিশাল বাঘিয়া আল আমিন কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং উজিরপুর গুঠিয়া বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। মেঝ ভাই ওমর ফারুক ঢাকায় ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বোনদের পরিবারও ধর্মীয় শিক্ষায় বেড়ে উঠেছে।
হাদী শিক্ষাজীবন শুরু করেন নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায়। পরে তিনি ভর্তি হন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায়। এখানেই বক্তৃতা, আবৃত্তি ও যুক্তিনির্ভর আলোচনায় তার দক্ষতা শিক্ষকদের পাশাপাশি সহপাঠীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আবৃত্তি ও উপস্থিত বক্তৃতায় তিনি ছিলেন বিশেষভাবে পারদর্শী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি অধিকার সচেতন ছিলেন এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ওসমান হাদি এক বিপ্লবী নেতৃত্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকার রামপুরা এলাকায় বসবাসকারী হাদি আন্দোলনের সময় স্থানীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলায় তিনি ছিলেন সক্রিয়। রাজপথে ছাত্র-জনতার পাশে থাকা, আন্দোলন সংগঠিত করা ও আহতদের সহায়তা-সব ক্ষেত্রেই তার উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।

